প্রকাশিত: Wed, Mar 27, 2024 1:29 PM
আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 9:35 AM

[১]ঝুঁকি অনুযায়ী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় বেড়েই চলছে অগ্নিকাণ্ড

সুজন কৈরী: [২] গত রোববার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা ও বাইরে পাঁচটি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গাউছিয়া কাঁচাবাজারে, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার একটি সুপারবোর্ড কারখানায় এবং পাবনার সাঁথিয়ার বনগ্রামে দুইটি পাটের গুদাম ও একটি তেলের মিলে আগুন লাগে। 

[৩] ফায়ার সার্ভিস বলছে, জনসাধারণের অসেচতনতা এবং প্রতিষ্ঠানগুলো আগুনসহ অন্যান্য ঝুঁকির বিষয়ে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। আর মৌসুমি আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াও একটি কারণ। এছাড়া আমাদের দেশ দ্রুত শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে ক্যামিকেল এজেন্ট ব্যবহার। ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, কিন্ত্র মানা হচ্ছে না অগ্নি নিরাপত্তা আইন। 

[৪] ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে সারাদেশে মোট ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। গড়ে প্রতিদিন ৭৭টি আগুন লেগেছে। এসব ঘটনায় সারাদেশে মোট ২৮১ জন আহত এবং ১০২ জন নিহত হয়েছেন। এতে ৭৯২ কোটি ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ১৪ টাকা মূল্যের সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে।

[৫] চলতি বছর জানুয়ারিতে সারাদেশে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ছিল ২৩৭২টি। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয়েছে ৩০০০টি। গত বছর জানুয়ারিতে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ছিল ৩৬৪৬টি। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ২৭১৩টি। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৩ সালের চেয়ে চলতি বছর অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে।

[৬] ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, রোজার মাসে সেহেরির সময় আগুনের ঘটনা ঘটে অসাবধানতার কারণে। কেউ হয়ত ধুমপানে অভ্যস্ত, কেউ কেউ রান্না করছেন বৈদ্যুতিক হিটার ব্যবহার করে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক লোড ব্যবহার ও মানহীন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়া আমাদের দেশ শিল্পায়নের দিকে যাচ্ছে। উন্নতমানের নান্দনিক সামগ্রী তৈরীসহ বিভিন্ন কাজে  কেমিক্যাল এজেন্ট ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এর ফলে ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়া ঈদের আগে ব্যবসার প্রয়োজনে অতিরিক্ত পণ্য মজুত করা হয়। এতেও রিস্ক ফ্যাক্টর বেড়ে যায়। ফলে অগ্নি দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে যায।  

[৬.১] তিনি বলেন, শীতকাল পার হওয়ার পর বসন্তে বৃষ্টির প্রবণতা শুরু হলেও প্রকৃতিতে একটা পরিবর্তন হয়। আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যায়, টেম্পারেচার বাড়ে। গাছের পাতা ঝরে যায়, অনেক সময় জীবন্ত গাছও শুকিয়ে যায়। আর যেসব দাহ্য বস্তু রয়েছে সেসব আরও শুকিয়ে যায়। টেম্পারেচার বেড়ে যাওয়ায় দাহ্যবস্তু ভেতর থেকে শুকিয়ে থাকে এবং বাইরে টেম্পারেচার বেড়ে যাওয়ার ফলে দাহ্য বস্তুর জ্বলে উঠার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। 

[৯] শাহজাহান শিকদার বলেন, এজন্য সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে। প্রত্যেককে অগ্নিনিরাপত্তা আইন মেনে চলতে হবে। অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জাম স্থ্পান করতে হবে।

[১০] তিনি আরও বলেন, মূলত ৪টি ধাপে ভবনকে নিরাপদ করতে হবে। প্রথমত, ভবন নির্মাণের সময় বিএমডিসি এবং ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম স্থাপন করতে হবে। তৃতীয়ত, এসব ব্যবস্থা গ্রহণের পর সেগুলো ব্যবহার করার জন্য উপযুক্ত জনবল থাকতে হবে। এজন্য ভবনের ১৮ শতাংশ লোককে প্রশিক্ষিত করতে হবে ফায়ার সার্ভিস থেকে। আর চর্তুর্থটি হলো, মাঝে মাঝে এসব প্রশিক্ষণের মহড়া করতে হবে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব